মসুর ডালের ক্ষতিকর দিক

মসুর ডালের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে না জেনেই প্রতিদিন খেয়ে যাচ্ছেন না তো। যদি না জেনে থাকেন তাহলে এখনি জেনে নিন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। মসুর ডালের যেমন রয়েছে অল্প কিছু ক্ষতিকর দিক তেমনি রয়েছে এর অনেক অনেক উপকারিতা।
আজকের এই পোস্টে মসুর ডাল সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করছি এই পোষ্টের মাধ্যমে মসুর ডাল সম্পর্কিত যত প্রশ্ন আপনাদের মনে আনাগোনা করতেছে সকল প্রশ্নের সমাধান পেয়ে যাবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

মসুর ডাল খেলে কি ক্ষতি হয়

মসুর ডাল হচ্ছে প্রোটিন যুক্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। তবে মসুর ডাল নিয়ম মেনে না খেলে অনেক সময় নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয়। এজন্য মসুর ডাল সবার জন্য উপযুক্ত নয়। যাদের উচ্চ ইউরিক এসিডের সমস্যা আছে তাদের জন্য কোনো ডাল-ই বেশি খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে মসুর ডাল বেশি বেশি খাওয়া থেকে তাদের বিরত থাকাই ভালো।

কারণ মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন ইউরিক থাকে। পিউরিন ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং সেই সাথে শরীরের বিভিন্ন জায়গার বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা বৃদ্ধি করে এজন্য বিশেষজ্ঞরা মসুর ডাল খেতে সতর্ক করেছেন। মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এজন্য বেশি পরিমাণে মসুর ডাল খেলে অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ফাইবারের পাশাপাশি এই ডাল প্রোটিনে ভরপুর এজন্য প্রতিদিন বেশি বেশি এ ডাল খেলে ওজন বৃদ্ধি হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকের আবার চুলকানি ও এলার্জি হয়ে থাকে। কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীকে মসুর ডাল খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন কারণ মসুর ডাল খাওয়ার ফলে কিডনিতে নতুন করে আরো পাথরের সৃষ্টি হয়।

মসুর ডালের উপকারিতা

আমাদের দেশে অনেক ধরনের ডাল পাওয়া যায়। যেমন, খেসারি ডাল,মসুর ডাল,মুগ ডাল,মটর ডাল,ছোলা ডাল, অড়হর ডাল প্রভৃতি। সব ডালই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এর মধ্যে খেসারি অন্যতম। এটি ডাল হিসেবে রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মুখ রোচক খাবার হিসেবেও পরিচিত। যেমন ডালের চচ্চড়ি নিরামিষ পিয়াজু ডালপুরি ডালের স্যুপ আমডাল পুই ডাল ইত্যাদি।

মাছ মাংসের পুষ্টির বিকল্প হিসেবে এই ডালকে ধরা হয় কেননা মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন যার কারণে এই ডালকে অনেকে আমিষ খাদ্য বলে। ফাইবার সমৃদ্ধ এই ডাল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনে, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে ত্বকে উজ্জ্বল ভাব আনে।

আমাদের শরীরে হাড়কে মজবুত করে ও শারীরিক গঠন ঠিক রাখতে হয় সহায়তা করে। মসুর ডাল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ যেমন ক্যালসিয়াম লৌহ ক্যারোটিন ভিটামিন বি-২ খাদ্য শক্তি খনিজ পদার্থ শর্করা আঁশ ইত্যাদি। ফলেট এবং ম্যাগনেসিয়াম এর উৎস বলা হয় মসুর ডালকে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের সর্বত্র রক্ত সঞ্চালন করে এবং অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
যাদের ডায়াবেটিকস রয়েছে তাদের জন্য এই ডাল উপকারি ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের চিনির পরিমাণ কমিয়ে এনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। যা আমাদের হজমে জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা প্রতিদিন রাতে খাবার মেনুতে মসুর ডাল রাখতে পারেন। এতে করে আপনাদের কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা থেকে অনেক আরাম পাবেন।
যিনারা অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছেন তারা ভাতের বিকল্প হিসেবে অল্প পরিমাণে ভাত এবং ভাতের চাইতে অধিক পরিমাণে এই ডাল খেতে পারেন এতে করে আপনাদের খুদা হ্রাস পাবে এবং দীর্ঘক্ষণ যাবৎ ভরা পেটের অনুভূতি থাকবে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য যে দুটি উপাদান বেশ প্রয়োজনীয় তা হলো আয়রন ও ফলিট যা মসুর ডালে একসঙ্গে দুটি বিদ্যমান। এতে করে গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করা যায়।

মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয়

মসুর ডাল এমন একটি ডাল যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ক্যালসিয়াম মিনারেল ইত্যাদি। এবং আরো রয়েছে উচ্চ মাত্রার ফাইবার যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করে দেয়। সেই সাথে মসুর ডালে কম পরিমাণে ফ্যাট এবং কম পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকায় ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এবং যারা অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাদের জন্য প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর মসুর ডালকে বলা হয় প্রোটিনের সমাহার। আপনি যদি আপনার বাড়তি ওজন কমানো নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন তাহলে প্রতিদিন ভাতের পরিবর্তে মসুর ডাল বেশি খান তাহলে দেখবেন আপনার ওজন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।

মসুর ডাল খেলে কি ওজন কমে

যারা অনেক বেশি মোটা তারা তাদের ওজন কমানোর জন্য কতই না কি করে থাকেন। কত জনের কাছে কত রকমের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। ওজন কমানোর জন্য অনেকে অনেক ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন কেউ কেউ ব্যায়াম করেন সাঁতার কাটেন সকলে এবং সন্ধ্যায় জগিং করেন আবার দেখা যায় অনেকে জিমে ভর্তি হন।

ওজন কমানোর জন্য উপরের সবগুলোই কাজ করে ভূমিকা পালন করে তবে আপনি কি জানেন এগুলো সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে ডায়েট খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় এমন সব খাবার রাখতে হবে যা খেলে ওজন কমে। এর মধ্যে মসুরের ডাল অন্যতম। কারণ মসুরে রয়েছে কম ফ্যাট যা আপনার স্বাস্থ্য বাড়াতে নয় বরং কমাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ
এবং রয়েছে প্রোটিন যার ফলে স্বাস্থ্য বাড়ায় না কিন্তু দেহের গঠন মজবুত ও পেশি শক্তিশালী হয়। ওজন কমাতে চাইলে মসুরের ডালের বিকল্প নেই। এই ডালে অনেক বেশি মাত্রায় ফাইবার আছে যার কারণে খাওয়ার পরে অনেকক্ষণ যাবৎ ভরা পেটের অনুভব হয়। তাই ওজন কমাতে প্রয়োজনীয় মাত্রায় মসুর ডাল খেতে পারেন এতে করে আপনার হজম প্রক্রিয়া সুন্দর হবে। মসুর ডাল হিসেবে রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি মসুর ডালের খিচুড়িও খেতে পারেন।

মসুর ডাল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

বহুকাল আগে থেকেই ত্বকের যত্নে মসুর ডাল বাটা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মসুর ডাল বাটা মুখে মাখার ফলে মুখের কালো দাগ ব্রনের দাগ মেছতা মুছে যায়। কোন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া ত্বক সুন্দর ও দাগ মুক্ত করতে মসুর বাটা অনন্য ভূমিকা রাখে। আপনারা যারা প্রাকৃতিকভাবে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া স্থায়ী সুন্দর দাগমুক্ত ত্বক চান তারা মসুর বাটা মুখে ব্যবহার করতে পারেন।

আগেকার দিনে বিয়ের কনে কে ফর্সা উজ্জ্বল দেখাতে বিয়ের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে মসুর ডাল বাটা মুখে ব্যবহার করা দেখা যেত এতে করে কনের মুখ আগের চাইতে ফর্সা উজ্জ্বল হতো। এটি ব্যবহারের ফলে আগের চাইতে ত্বক ফর্সা হয় ও ত্বকে জমে থাকা ময়লা বের করে ও ত্বকের মরা চামড়া পরিষ্কার করে ত্বকের আসল সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে।

শুষ্ক ও তৈলাক্ত ত্বক উভয় ক্ষেত্রেই মসুর ডালের ফেসপ্যাক খুবই কার্যকরী। ভালো ফলাফল পেতে দুধের সাথে মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে পেস্ট করে নিয়ে ভালোমতো মুখে মাখিয়ে আধাঘন্টা রেখে দিন এবং আধা ঘন্টা পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এভাবে এক সপ্তাহ ব্যাপারে ফলে আপনি আপনার ত্বকের পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।

লেখকের মতামত

মসুর ডাল এমন একটি ডাল যা প্রচুর পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ও ভরপুর। আপনি এটিকে বিভিন্ন কাজে লাগাতে পারেন যেমন তরকারি হিসেবে ডাল রান্না করে খেতে পারেন। মসুরের ডালের খিচুড়ি ও বিরিয়ানি খেতে অতুলনীয় স্বাদ পাওয়া যায়। আবার আপনি চাইলে ডাল কে ত্বকের যত্নের জন্যও ব্যবহার করতে পারেন মসুর ডালের বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বককে সুন্দর কোমল চিরস্থায়ী ফর্সা করতে পারেন।

এক কথায় বলতে গেলে মশুরের ডাল একের ভিতর অনেক। মসুরের ডাল দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ ভিটামিন ম্যাগনেসিয়াম ফাইবার মিনারেল পূরণ করার পাশাপাশি ত্বককে সুন্দর অপ্রানবন্ত করে তুলতে বেশ উপযোগী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url