স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা সকলেই জানি স্যালাইন খেলে ক্লান্তি দূর হয়। কিন্তু স্যালাইন আমরা কেন খাবো,
স্যালাইন খেলে আরও কি কি উপকার পাওয়া যায় এই বিষয়ে আমরা অনেকে সম্পূর্ণভাবে
জানিনা। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক স্যালাইন খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়।
ছোট থেকে বড়, বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার জন্যই স্যালাইন প্রয়োজন। স্যালাইন হচ্ছে লবণ
ও গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি যা শরীরের পানি স্বল্পতা ও লবণের ঘাটতি পূরন করে এবং লবণ
ও পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। স্যালাইন খেলে শরীরে সবলতা অনুভব করা যায়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
- স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা
- ঘরোয়া ভাবে স্যালাইন তৈরির পদ্ধতি
- চিকিৎসায় স্যালাইনের ভূমিকা
- স্যালাইন খেলে কি প্রেশার বাড়ে
- হাই প্রেশার রোগী স্যালাইন খেতে পারবে কি
- স্যালাইন খেলে কি ওজন বাড়ে
- স্যালাইন খেলে কি গাস বাড়ে
- স্যালাইন খাওয়ার অপকারিতা
স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা
স্যালাইন খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের পানি শূন্যতা দূর হয়। পানি শূন্যতা রোগে
স্যালাইন আমাদের জীবন রক্ষাকারী উপাদান। স্যালাইন খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের
হাইড্রেশনের মাত্রা ঠিক রাখে। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়
যেমন, অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীর ঘেমে যাওয়ার কারণে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে পানি
ও লবণ বের হয়ে যায় ফলে শরীর ক্লান্ত ও দূর্বল লাগে তখন একটা স্যালাইন খেলে শরীরে
শক্তি ফিরে পাওয়া যায়, ক্লান্তি কেটে যায়।
আরো পড়ুনঃগর্ভাবস্থায় স্যালাইন খাওয়া যাবে কি
বিশেষ করে যারা প্রচণ্ড রোদে মাঠে কাজ করেন, বিভিন্ন কৃষি কাজ করেন তাদের প্রচুর
ঘাম হওয়ার কারণে শরীরে সোডিয়ামের অভাব দেখা দেয় তখন আর কাজ করার মতো পর্যাপ্ত
শক্তি শরীরে থাকে না সে ক্ষেত্রে স্যালাইন পান করার ফলে শরীরের সোডিয়ামের ঘাটতি
পূরণ করার পাশাপাশি স্যালাইনে থাকা গ্লুকোজ শরীরে বাড়তি শক্তি যোগাতে সাহায্য
করে।
ঘরোয়া ভাবে স্যালাইন তৈরির পদ্ধতি
স্যালাইন তৈরি করার জন্য আপনার ৩টি উপাদানের প্রয়োজন হবে আধা পোয়া বিশুদ্ধ পানি
এক চিমটি লবণ ও এক মুঠ গুড় অথবা চিনি একটি পরিষ্কার পাত্রে আধা পোয়া বিশুদ্ধ পানি
নিন। পানিতে এক চিমটি আয়োডিনযুক্ত লবণ ও এক মুঠ গুড় অথবা চিনি দিন তারপর ভালোভাবে
পানি গুড় অথবা চিনি ও লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন তাহলেই আপনার খাওয়ার স্যালাইন
প্রস্তুত। মনে রাখতে হবে প্রস্তুত করার পর ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত এই স্যালাইন খেতে
পারবেন। ৬ঘণ্টা পার হয়ে গেলে খাওয়া উচিৎ নয়।
চিকিৎসায় স্যালাইনের ভূমিকা
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেটেড রোগীদের হাইড্রেট করতে স্যালাইন দেওয়া হয়। এছাড়াও
শরীর দূর্বলতা, ডায়রিয়া, কলেরা, পাতলা পায়খানা, ক্লান্তি অবসান থেকে পরিত্রাণ
পেতে স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত পাতলা পায়খানার
কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও পানি বের হয়ে যায়।
তখন আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা ও সোডিয়ামের অভাব দেখা দেয় এবং শরীর দূর্বল হয়ে
যায়। পানি স্বল্পতা পূরণ বা রিহাইড্রেশন এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যা আমরা
স্যালাইন পান করার মাধমে পেয়ে থাকি।
স্যালাইন খেলে কি প্রেশার বাড়ে
আপনার প্রশ্ন যদি হয়ে থাকে স্যালাইন খেলে কি প্রেশার বাড়ে? তাহলে আপনার প্রশ্নের
উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, স্যালাইন আমাদের প্রেশার বাড়াতে সাহায্য করে। স্যালাইনে
বিদ্যমান গ্লুকোজ প্রেশার বাড়িয়ে দেয়। আমরা যারা লো ব্লাড প্রেশারের রোগী আছি
তাদের জন্য স্যালাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অনেক সময় লো ব্লাড প্রেশারের কারণে
মাথা ঘোরে আর তখন আপনি অবশ্যই চাইবেন মাথা ঘোরা থেকে পরিত্রাণ পেতে।
আর এ জন্য স্যালাইন বড় ভূমিকা পাল করতে পারে। একটি স্যালাইন খাওয়ার ফলে আপনি মাথা
ঘোরা থেকে পরিত্রাণ পাবেন। কারণ স্যলাইনে থাকা গ্লুকোজ আপনার প্রেশার বজায় রাখতে
সহায়তা করবে।
হাই প্রেশার রোগী স্যালাইন খেতে পারবে কি
স্যালাইন তথা লবণাক্ত যে কোন খাবার প্রেশার বাড়িয়ে দেয়। গ্লুকোজ ও প্রেশার বাড়িয়ে
দেয়। হাই প্রেশার রোগীদের লবণাক্ত জাতীয় খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে
তার মানে এই না যে খেতেই পারবেন না। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার সময় শরীর থেকে
প্রচুর পরিমাণে লবণ ও পানি নির্গত হতে থাকে তখন উচ্চ রক্ত চাপ সম্পন্ন রোগী
স্যালাইন খেলে প্রেশার বাড়ে না বরং রক্ত চাপ স্বাভাবিক রাখার জন্য অর্থাৎ রক্ত
চাপ যাতে অনেক কমে না যায় সে জন্য স্যালাইন খেতে বলা হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে রোগীকে
হাসপাতালে নিয়ে শিরায় স্যালাইন ও দেওয়া হয়।
স্যালাইন খেলে কি ওজন বাড়ে
স্যালাইন খেলে সরাসরি ওজন বাড়ে না তবে বেশি বেশি স্যালাইন খেলে স্যালাইনে থাকা
সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখতে যার ফলে ওজন কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আমরা তো
শখে শখে স্যালাইন খাই না তাই আপনি নির্দ্বিধায় খেতে পারেন এতে করে আপনার ওজন বেড়ে
যাবে না।
স্যালাইন খেলে কি গাস বাড়ে
না স্যালাইন খেলে গ্যাস বাড়ে না। স্যালাইনে এমন কোন উপাদান নাই যা গ্যাস বাড়ায়।
সাধারণত অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে গাস বাড়ে।
স্যালাইন খাওয়ার অপকারিতা
সাধারণত স্যালাইন খাওয়ার তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা নেই বললেই চলে।
কিন্তু আমরা অনেক সময় যতটুকু পরিমান পানিতে স্যালাইন মেশানো প্রয়োজন তার চাইতেও
কম পানিতে অর্থাৎ ৫০০ মিলিলিটারের ও কম পানিতে স্যালাইন মিশিয়ে খাই।
এতে করে আমাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।পরিমাণের চাইতে কম পানিতে স্যালাইন
মিশিয়ে খেলে শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েকগুণ যার ফলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ
থেকে পানি বের হতে পারে এতে করে কোষ নষ্ট হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
আপনি যদি পুরো আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনার স্যালাইন সম্পর্কে
সম্পূর্ণ একটা স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন। আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অন্যকেও
উপকৃত করতে পোস্টটি শেয়ার করে দিতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url