ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা অপরিসীম। শিশুদের মেধা বিকাশে খেলাধুলা অন্যতম ভূমিকা পালন করে। নিছক পুস্তকনির্ভর শৈশব কখনোই ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। তা জীবনের সর্বস্তরে বিপদ ডেকে আনে।



পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণ করে সঠিক ভারসাম্য এনে দেয়। শুধুমাত্র বিদ্যাবোঝাই পণ্ডিত হওয়া আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ না। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ জ্ঞান বিদ্যা বুদ্ধি শক্তি ও দূরদর্শিতায় নিজেকে ভরিয়ে তোলা এবং নীরোগ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষের মত মানুষ হওয়া।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

একটি বাসা বাড়ি কেমন হবে তা যেমন নির্ভর করে তার ভিত এর উপরে ঠিক তেমনি একজন ব্যক্তির ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি রচিত হয় ছাত্রজীবনে। আর ছাত্র জীবনের এই ভিতকে সুস্থ সুন্দর সাবলীল ও মজবুত করতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। এই সময়টা যদি আমরা ঠিক মতো কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমদেরকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না।

ছাত্রজীবনে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় পড়াশোনার জন্য। তাই শরীরকে সুস্থ রাখা অতীব জরুরী কেননা শরীর সুস্থ না থাকলে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা সম্ভব হয় না। খেলাধুলা করার মাধ্যমে আমাদের শরীর তথা মন দুটোই ভালো থাকে। একঘেয়েমি পড়াশোনা করতে করতে ডিপ্রেশনে চলে যাই তখন আর কোন কিছুই ভালো লাগে না। বুঝতে পারি না কি করবো না করবো।


তখন অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে গিয়ে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়ে যায়। কেউ কেউ আবার আত্মহত্যাও করে ফেলে। বর্তমানেচ মাদকাসক্তর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তরুণরা এর প্রতি বেশি ঝুকতেছে। মাদকাসক্তির কবল থেকে তরুণ ও যুব ছাত্রসমাজকে বাঁচাতে নিয়মিত খেলাধুলা করতে হবে।

শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। নবীনদের হাতেই গড়ে উঠবে আগামীর বিশ্ব। তাই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের দিকে আমাদেরকে যত্নশীল হতে হবে। শিশুর শারীরিক মানসিক ও মেধা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো খেলাধুলা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা জরুরী।

পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদেরকে নিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে যেমন সাঁতার প্রতিযোগিতা দৌড় প্রতিযোগিতা লাফালাফি প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।

এতে করে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পাশাপাশি দেহের গঠন সুন্দর ও সাবলীল হবে। স্বামী বিবেকানন্দের মতে-"দূর্বল মস্তিষ্ক কিছু করতে পারে না আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সরল মস্তিষ্কের হইতে হবে"।

চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা

খেলাধুলা ছাত্রজীবনে চরিত্র গঠনে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। খেলার মাঠে বন্ধুসুলভ আচরণ পারস্পারিক সহযোগিতা উদার মনোভাব তৈরি করে।খেলা ধুলায় দলপতি হিসেবে নেতৃত্ব দানের ফলে সামাজিক জীবনে নেতৃত্ব দানের গুণাবলী ও মনোভাব ফুটে ওঠে। সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার প্রবণতা বাড়ে।

এছাড়াও দৃঢ় মনোবল সংগ্রামী চেতনা একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল সহমর্মিতা ধৈর্য্য সংযম আত্মবিশ্বাস প্রভৃতি গুণগুলো খেলা ধুলার মাধ্যমে বিকশিত হয়। যা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগে। সব ধরনের পরিস্থিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।

শরীরচর্চায় খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

আমরা সকলেই স্বাস্থ্য বিষয়ে খুব সচেতন। সুস্থ সবল দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজন শরীরচর্চা আর এজন্য আমরা বিভিন্ন ব্যায়াম করে থাকি। কিন্তু আপনি জানেন কি নিয়মিত খেলাধুলা করলে ব্যায়াম করার তেমন কোন প্রয়োজন পড়ে না। কারণ খেলাধুলার মাধ্যমেই শরীরচর্চা ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যায়।অসুস্থ শরীর পরিশ্রম করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে সেই সাথে মেজাজও খিটখিটে করে ফেলে।

কোন কাজে মন বসে না। মনের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তার উদয় হয়। নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। নিয়মিত শরীরচর্চা দেহে শক্তি যোগায় এবং মন মেজাজ প্রফুল্ল করে। সুস্থ শরীরে বিরাজ করে সুস্থ মন। আর শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত খেলাধুলা করা বাঞ্ছনীয়।

জাতি গঠনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

জাতি গঠনের পূর্বশর্ত হলো সুস্থ স্বাভাবিক মন মানসিকতা। অসুস্থ বিকৃত মানসিকতার ব্যক্তি কখনোই একটি জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে না। যাদের মস্তিষ্ক বিকৃত তারা কারো সাথে ভালো আচরণ করতে পারে না। কারো সাথে সু সম্পর্ক রাখতে পারে না। জাতি গঠনের জন্য সকলে মিলে এক হতে হয়। খেলাধুলা করার মাধ্যমে আমরা সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই।

আমরা যদি খেলাধুলার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যেকোন একটি খেলায় কয়জন প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ ক্রিকেট খেলার কথা যদি বলি তাহলে আমরা দেখতে পাই ১১ জন খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে একটি দল গঠিত হয়। এবং তার মধ্যে একজন দলপতি বা অধিনায়ক থাকে। খেলার মাঠে অধিনায়ক সহ মোট ১১জন খেলতে নামে।অধিনায়ক ১১ জনের পুরো দলটাকে নেতৃত্ব দেয়।সকল খেলোয়াড় অধিনায়কের নির্দেশ অনুযায়ী খেলে থাকে।

দলপতি বা অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে সবাইকে এক করে সুন্দর ও সু শৃঙ্খলভাবে খেলা পরিচালনা করার মাধ্যমে ব্যক্তির নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা বিকশিত হয়। বাকি সব খেলোয়াড়রা দলপতির নির্দেশনা মেনে খেলার মাধ্যমে সংযম নিয়মানুবর্তিতা অন্যের মতামতকে সন্মান প্রাধান্য ও অন্যের মতামতকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়।

বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধে খেলাধুলার ভূমিকা

বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ বলতে এক দেশ হতে আরেক দেশের জনগোষ্টির সাথে সু সম্পর্ককে বুঝায়। প্রাচীনকাল থেকেই এক দেশ আরেক দেশের সাথে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করে। যেমন অলিম্পিকে ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে প্রতিযোগী আসে খেলায় অংশগ্রহণ করতে। যেখানে এক দেশের সাথে আরেক দেশের খেলোয়াড়ের প্রতিযোগীতা বা লড়াই হয়।

এভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিভিন্ন ধরনের মানুষজনের প্রতি গড়ে উঠে একটা সু সম্পর্ক। আবার যদি আমরা ফুটবল খেলার কথা বলি তাহলে দেখা যায় আমাদের দেশের হয়ে যারা ফুটবল খেলে থাকেন তাদেরকে সমর্থন করার জন্য ফুটবল প্রেমী ভক্তরা দেশের বাইরে খেলা অনুষ্ঠিত হলে সে দেশে গিয়ে খেলা উপভোগ করেন।

এতে করে খেলোয়াড় তথা সমর্থকেরাও ঐ দেশের সমর্থকদের সাথে একটা সু সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাই বলা যায় খেলাধুলা বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরিতে বড় অবদান রাখে। এতে করে বিভিন্ন দেশের সাথে সু সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং কুটনৈতিক সম্পর্ক ও সমৃদ্ধি হয়।

সম্পৃতির বন্ধন তৈরিতে খেলাধুলার অবদান

খেলাধুলা এমন একটা মাধ্যম যার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারি, এমনকি চলার পথের আমাদের অনেক শিক্ষা লাভ করি এই খেলাধুলা থেকে। যেমন, খেলার মাঠে সবাইকে এক নজরে দেখা হয়। ধনী গরীব ভেদাভেদ করা হয় না। একজন খেলোয়াড় হিসেবে একজন ধনী পরিবারের সন্তান যে সন্মান মর্যাদা এবং অধিকার পেয়ে থাকে।

ঠিক একই রকম সন্মান মর্যাদা ও অধিকার একজন গরীব খেলোয়াড় ও পেয়ে থাকে। ধনী-গরীব হয়ে উঠে ভাই ভাই। ধনী বলে যে অহংকার থাকে সেটি খেলাধুলার ভিতরে থাকলে জন্ম নেয় না। একজন আদর্শ খেলোয়াড় কখনোই ধনী গরীব পৃথক করেন দেখেন না।

তার কাছে সকলেই সমান হয়ে থাকেন। খেলার মধ্যে সৃষ্ট নিয়ম কানুন অনুসরণ করার ফলে একে অপরের প্রতি আস্থা বিশ্বাস ভরসা নির্ভরযোগ্যতা ইত্যাদি গড়ে উঠে। এভাবেই খেলার মাঝেই একে অপরের প্রতি সম্পৃতির বন্ধন গড়ে উঠে।

আধুনিক জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান যুগকে বলা হয় আধুনিক যুগ। যা প্রযুক্তি নির্ভর যুগ নামেও পরিচিত। এই যুগে এসে আগের যুগের মতো খেলাধুলা আর দেখা যায় না।আগেকার অনেক খেলাধুলাই এখন বিলুপ্ত। এভাবে চলতে থাকলে আরো অনেক অনেক খেলা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবে। যত দিন যাচ্ছে তত খেলাধুলার প্রচলন কমে যাচ্ছে। সবাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়তেছে।

ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটারে বিভিন্ন গেমে আসক্ত হয়ে পড়তেছে। এতে করে শারীরিক ও মানসিক দুভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কারণ মোবইল ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফলে মারাত্নক ভাবে চোখের সমস্যা হয় এবং মাথা ব্যাথাও করতে পারে।। এজন্য আমাদের উচিৎ সকলে মিলে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করা।

তাহলে আমাদের মাঝে একতা মনোভাবের সৃষ্টি হবে শরীরচর্চাও হবে দেহ ও মন দুটোই সুস্থ থাকবে। শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পাবে শারীরিক গঠন সুন্দর হবে। তাই আধুনিক জীবনে সুস্থ সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে নিয়মিত খেলাধুলা করতে হবে তাহলে সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে জীবনে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে।

অত্যাধিক খেলাধুলার অপকারিতা

প্রত্যেকটা জিনিসের ক্ষেত্রেই ভালো মন্দ দুটোই রয়েছে। তাই তো বলা হয়েছে কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। খেলাধুলায় কোন অপকারিতা নেই। তবে আমাদেরকে অবশ্যই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ম মেনে খেলতে হবে।

আপনি ছাত্র/ছাত্রী হলে অথবা আপনি কোন পেশায় নিয়োজিত থাকলে সে কাজ বাদ দিয়ে এবং পড়াশোনা না করে সারাদিন যদি খেলে বেড়ান তাহলে আপনার উপকারের চাইতে অপকারই বেশি হবে। এছাড়াও অতিরিক্ত খেলা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। এতে আহত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

আমার মতামত

সুস্থ সুন্দর হাস্যোজ্জ্বল সুঠাম দেহের অধিকারী হতে হলে খেলাধুলার বিকল্প নেই। নিয়মিত খেলাধুলা করার ফলে মন পবিত্র থাকে। মাথায় খারাপ চিন্তা ঘুরপাক করে না। শরীরে নতুন উদ্যোম পাওয়া যায়। অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা দূর হয়। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। সুতরাং আমি এইটাই বলবো যে খেলাধুলা করা আমদের জীবনের আশীর্বাদস্বরূপ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url